প্রসঙ্গ ঘোড়ার মাংস খাওয়া : ইসলাম ও পৌরাণিক মতে মিল
ইসলাম : সহীহ্ বুখারী ৫৫২০: জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খাইবারের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাধার মাংস খেতে নিষেধ করেছেন। আর ঘোড়ার মাংসের ব্যাপারে তিনি অনুমতি প্রদান করেছেন। [৪২১৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০১০)
মিশকাত ৪১০৭: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের (যুদ্ধের) দিন গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম করেছেন এবং ঘোড়ার মাংস সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন।
আরো প্রমাণ: সহীহ : সহীহুল বুখারী ৫৫২০, ৫৫২৪; মুসলিম (১৯৪১)-৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৭৩, আবূ দাঊদ ৩৭৮৮, নাসায়ী ৪৩২৭-৪৩৩০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৫৯, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৯২৮, মুসনাদে আহমাদ ইবনু হাম্বাল ১৪৯৩৩, দারিমী ১৯৯৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৯৩৩।
পৌরাণিক: যদূবধ্যমুদরস্যাপবাতি য আমস্য ক্রবিষো গন্ধো অস্তি ।
সুকৃতা তচ্ছমিতারঃ কৃণ্বন্তূত মেধং শৃতপাকং পচন্তু ॥১০॥
যত্তে গাত্রাদগ্নিনা পচ্যমানাদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি ।
মা তদ্ভূম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তু ॥১১॥
যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্বং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি ।
যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উতো তেষামভিগূর্তির্ন ইন্বতু ॥১২॥
যন্নীক্ষণং মাংস্পচন্যা উখায়া যা পাত্রাণি যূষ্ণ আসেচনানি ।
ঊষ্মণ্যাপিধানা চরূণামঙ্কাঃ সূনাঃ পরি ভূষন্ত্যশ্বম্ ॥১৩॥
ঋগ্বেদ ১.১৬২.১০-১৩
সায়ণভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ- 
১০.উদরের যে অজীর্ণ তৃণ বাহির হইয়া যায়,
অপক্ক মাংসের যে লেশ মাত্র থাকে, ছেদনকর্তা তাহা নির্দোষ করুন, এবং পবিত্র মাংস,[সায়ণ: "উত অপি চ "মেধং মেধ্যং যজ্ঞার্হং পশ্ববয়বং “শৃতপাকং দেবয়োগ্যপাকোপেতং যথা ভবতি তথা “পচন্তু পিতৃমনুষ্যাদিয়োগ্যম্ অতিপক্বম্ ঈষৎপক্বং চ মা কুর্বন্ত্বিত্যর্থঃ] =
দেবতাগণের উপযোগী করিয়া পাক করুন।
১১.
হে অশ্ব! অগ্নিতে পাক করিবার সময়, তোমার গাত্র হইতে যে রস বাহির হয়, এবং যে অংশ শূলে আবদ্ধ থাকে, তাহা যেন ভূমিতে পড়িয়া না থাকে, এবং তৃণের সহিত মিশ্রিত না হয়। [সায়ণ: “তৎ তাদৃশম্ "উশদ্ভ্যঃ কৃৎস্নং হবিঃ কাময়মানেভ্যঃ "দেবেভ্যঃ “রাতং দত্তম্ “অস্তু] =
দেবতারা লালায়িত হইয়াছেন, সমস্তই তাঁহাদিগকে প্রদান করা হউক।
১২. [সায়ণ: কিঞ্চ "যে “চার্বতো "মাংসভিক্ষামুপাসতে যে নরাঃ অস্য অর্বতঃ অশ্বস্য হুতশিষ্টমাংসয়াচনামুপাসতে কাঙ্ক্ষন্তে...যে চার্বতোঽশ্বস্য মাংসভিক্ষামুপাসতে তেষামভিগূর্তির্ন ইন্বতু তেষাম্ উদ্যমঃ সফলো ভবত্বিত্যর্থঃ] = যা
হারা চারিদিক হইতে অশ্বের পাক দর্শন করে; যাহারা বলে উহার গন্ধ মনোহর হইয়াছে, এখন নামাও, এবং যাহারা মাংস ভিক্ষার জন্য অপেক্ষা করে, তাহাদিগের সংকল্প আমাদিগের সংকল্প হউক।
১৩.
যে কাষ্ঠদণ্ড মাংস পাক পরীক্ষার্থ ভাণ্ডে দেওয়া হয়, যে সকল পাত্রে রস (ঝোল) রক্ষিত হয়, [সায়ণ: ঊষ্মণ্যা ঊষ্মনিবারণার্হাণি পাত্রাণি তথা “চরূণাং পাত্রাণাং মাংসপূর্ণানাম্ “অপিধানা অপিধানানি তৎসাধনানি তথা “অঙ্কাঃ হৃদয়াদ্যবয়বাঙ্কনসাধনাঃ বেতসশাখাঃ “সূনাঃ অবদানসাধনাঃ স্বধিত্যাদয়ঃ] =
যে সকল আচ্ছাদন দ্বারা উষ্ণতা রক্ষিত হয়, যে বেতস শাখাদ্বারা অশ্বের অবয়ব প্রথমে চিহ্নিত করা হয়, এবং যে ছুরিকা দ্বারা (পরে ঐ চিহ্ন অনুসারে অবয়ব কর্তিত হয়), ইহারা সকলেই অশ্বের মাংস প্রস্তুত করিতেছে।
[এই ধরনের অরূপসমৃদ্ধ, হিংসাত্মক, মধ্যযুগীয়, মূল মন্ত্র তাৎপর্য বিরোধী, ঈশ্বরীয় জ্ঞানের অবমাননাস্বরূপ ব্যাখ্যা সর্বৈব পরিত্যাজ্য]
প্রকৃত সনাতনী বৈদিক অর্থ: 
১০. হে বিদ্বানগণ! তোমরা যারা উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত করো, পাকস্থলীতে অবস্থানরত খাদ্যের গন্ধ কাঁচা খাদ্যের দিকে প্রবাহিত হয়, আর আঘাতযোগ্য বায়ু দূরে সরে যায় এবং তাদেরও আঘাত করে। তোমরা খাদ্যের রস ও সিদ্ধভাগ হজম করো। এইভাবে খাদ্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করো ও তা গ্রহণ করো।
[যারা পাকস্থলীর রোগ দূর করার জন্য সুস্বাদু ও রসযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে, তারা সুখী হয়।]

১১. হে পণ্ডিত! তোমার হাত, যা সদা সক্রিয় ও পরিণতশক্তিসম্পন্ন, যেন ক্রোধরূপে প্রধান অস্ত্রকে সম্মুখে লক্ষ্য করে আঘাত করে, এবং শত্রুকে পতিত করে। তবে তা যেন মাটিতে বা খড়-ঘাসে পড়ে নষ্ট না হয়; বরং তা প্রদান হোক দেবতাদের, অভিলাষীদের ও শত্রুনাশের উদ্দেশ্যে।
[অর্থাৎ, জ্ঞানী ও শক্তিশালী ব্যক্তিরা যখন যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করেন, তা যেন চিন্তাহীন ক্রোধে নয়, বিবেচনা করে, যেন অস্ত্র শত্রুনাশে কার্যকর হয়, অপচয়ে নয়।]

১২. যে ব্যক্তি বহুজনের ভোজনের জন্য প্রস্তুত ও রন্ধিত খাদ্য সর্বত্র পর্যবেক্ষণ করে, যে জল সিদ্ধ করে রুচিকর করে, যে আহারের উপযোগী খাদ্য ভিক্ষা বা সংগ্রহ করে, সে যেন সেই খাদ্যের পরিশ্রম ও সুবাসের ফল পায়। হে পণ্ডিত! তুমি ক্রমাগত সেইরূপ দোষ দূর করো অর্থাৎ মাংসভোজনের অভ্যাস।
[যারা খাদ্য ও জল বিশুদ্ধ করে, সিদ্ধ করে, সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ করে, তারা কর্মঠ ও উদ্যোগী হয়।]

১৩. যে ব্যক্তি হাঁড়িতে মাংস রাঁধে, সে ক্রমাগত রান্নার সহায়ক দণ্ড দিয়ে তা নাড়ে ও লক্ষ্য করে, সেখানে মন বিষণ্ণ করে। সে ভালোভাবে জানে সেই চিহ্নগুলো, যা যথাযথভাবে খাদ্যের রস সিদ্ধ ও মিশ্রণে সহায়ক যেমন- হাঁড়ির মুখ ঢাকনা, তাপপ্রয়োগ, জলদানের পরিমাণ ইত্যাদি। অশ্বরাও চারিদিকে সজ্জিত ও অনুপ্রাণিত হয়।
[অর্থাৎ, মাংসরন্ধন পাপমূলক কাজ। যারা এই পাপ থেকে মুক্ত, তারা জলের সঠিক ব্যবহার, আগুনের সঠিক নিয়ন্ত্রণ, হাঁড়ির সঠিক আবরণ ও রান্নার প্রক্রিয়া জানে তারা প্রকৃত রন্ধনশিল্পে পারদর্শী। যারা অশ্বকে সুশিক্ষিত ও পরিপালিত করে, তারা যাত্রায় আরাম পায়।]

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যাবলম্বনে অনুবাদ ড. কৃষ্ণকান্ত বৈদিক শাস্ত্রী।