পৌরাণিক ও স্মার্ত নিয়মে বিধবা নারীর কর্তব্য কী কী ?

 


পৌরাণিক ও স্মার্ত নিয়মে বিধবা নারীর কর্তব্য কী কী ?
বৈদিক শাস্ত্রে বিধবার জন্য বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আজীবন ব্রহ্মচারিণীর মতো থাকা, সন্তানে ইচ্ছুক হলে দত্তক গ্রহণ, নিয়োগ কিংবা সর্বশেষ মতে পুনর্বিবাহ বা যা বিধবাবিবাহ নামেও পরিচিত। সমাজে আমরা বিধবা বিষয়ে নানা মতামত দেখতে পাই। এদের কিছু জিনিস শাস্ত্রীয়, কিছু 'অশাস্ত্রীয়' ও কিছু লোকাচার (যাতে অনাচারও আছে)। লোকাচার বিষয়ে বলার কিছু নেই। তা অবশ্যই ব্যক্তিগত ও সামাজিক ব্যাপার যা কালে কালে পরিবর্তিত হবে এই আশা করা যায়। ভগবদুক্তিতে,
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥
[গীতা ১৬।২৪]
= শাস্ত্রই প্রমাণ কর্তব্য ও অকর্তব্য কী হবে সেই বিষয়ে । অর্থাৎ আমার কী করা উচিত বা অনুমোদিত কিংবা কী করা অনুচিত বা নিষিদ্ধ তা আমাকে বলবে শাস্ত্র । এবং সেই শাস্ত্রবিধান জেনেই কর্ম করতে হবে।
শাস্ত্রীয় বিধান কী তা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। এখন এই যে অশাস্ত্রীয় বলা হলো এটা নিয়ে দ্বিমত আছে। বিধবার অধিকাংশ এসব বিধান স্মার্ত ও পৌরাণিক। আধুনিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ সনাতনী কতটা তা অজ্ঞাত হলেও শাস্ত্র মানার ক্ষেত্রে ১৬ আনা যথেচ্ছাচারী। পৌরাণিক উপাসনা বা আচার পালনেও তারা যেটা নিজেদের মনের সাথে মেলে ও যাতে কোনো নিয়ম-নীতি নেই তাতে আগ্রহী হন এবং যাতে নিজের রুচি মেলে না তা অস্বীকার করেন। খুবই উপহাসের বিষয় যেই গ্রন্থসমূহকে তারা 'পঞ্চম বেদ' বলে দাবি করেন সেই গ্রন্থের বিধানই নিজের পছন্দের বিরুদ্ধে গেলে 'যুক্তি বুদ্ধি অনুযায়ী বর্তমানে আর চলে না' বলে অবজ্ঞা করতেও পিছপা হন না। যাই হোক শাস্ত্রালোচনার ভূমিতে এসব মতামতের বিন্দুমাত্র মূল্য নেই। কেননা, যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন -
য়ঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্॥
[গীতা ১৬।২৩]
= যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারে প্রবৃত্ত হয়, সে সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় না, সুখ প্রাপ্ত হয় না ও পরম গতি প্রাপ্ত হয় না
 
গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর গুরু স্বামী করপাত্রী তার 'বেদার্থপারিজাতঃ' গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১৭৪৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, বিধবাবিবাহ একটি অধার্মিক কৃত্য অর্থাৎ পাপের কাজ। দুর্গাদাস লাহিড়ী তার 'জ্ঞানবেদ' গ্রন্থের ২২৫ ও ২২৮ পৃষ্ঠাতেও বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধাচারণ পাওয়া যায়। দুর্গাদাস লাহিড়ীর মতে বিধবার দুইটিই রাস্তা - সহমরণ কিংবা আমৃত্যু ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করা। 
 
এদিকে পুরাণে কী কী লক্ষণ থাকলে নারী বিধবা হবে তার বেশ কিছু বিচিত্র উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। যেমন-
(১) যদি কোনো নারীর চুল বক্র [curl] ও চোখ গোল হয় তবে তার স্বামী অচিরেই মারা যায়। [গরুড় পুরাণ ১।৬৪।৩]
বক্রকেশা চ যা কন্যা মণ্ডলাক্ষী চ যা ভবেৎ।
ভর্ত্তা চ ম্রিয়তে তস্যা নিয়তং দুঃখভাগিনী ॥
 
(২) যদি নারীর দুই উরু লোমশ হয়; কোমর নিচু-চ্যাপ্টা-দীর্ঘ-অমাংসল,শক্ত,লোমযুক্ত বা খাটো হয় বা কাঁধ যদি বাঁকা, মোটা, বেশী লোমযুক্ত হয় বা বাম স্তনে যদি জড়ুল থাকে তবে ১টি পুত্র প্রসবের পর ঐ নারী বিধবা হয়। আবার যার দুই হাত লম্বা ও শুকনো, অনেক লোমযুক্ত বা লোম কুচকানো, মোটা,বিচ্ছিন্ন ও হলুদ রঙের সেই নারীও বিধবা হবে। যদি নারীর আঙুলের সংখ্যা ২০র বেশী হয় তবেও নারী বিধবা হয়। বিস্তারিত স্কন্দপুরাণের কাশীখণ্ডের ৩৭ অধ্যায়ে বিদ্যমান। 
 
(৩) পূর্বোক্ত একই অধ্যায় অনুযায়ী, যদি গুহ্যদেশ থেকে কোমর অব্দি ডান দিকে আবর্তিত রেখা বা পেট থেকে পিঠ অব্দি এমন রেখা থাকে তবে সে নিঃসন্তান বিধবা হয়। গলায় যদি এমন ডান দিকে ঘোরা (ক্লকওয়াইজ) রেখা থাকে, গ্রীবার মাঝে যদি থাকে তবে সেই নারী এক বছরের মধ্যে বিধবা হবে। যেসব নারীর তালুতে বামদিকে ডান আবর্ত বা বামাবর্ত [clockwise & anticlockwise] থাকে তবে তাদের বিয়ে করা ব্যক্তিরা ১০ দিনের মধ্যে মারা যায় ও তারাও বিধবা হয়। 
 
(৪) গরুড় পুরাণ [১।৬৪।৮] অনুযায়ী, যে নারীর দুইপাশ ও দুইস্তন লোমে ঢাকা এবং ওষ্ঠ-অধর সমুন্নত হয় সেই স্বামীর শীঘ্রই মরণ ঘটে।
যস্যাস্তু রোমশৌ পার্শ্বৌ রোমশৌ চ পয়োধরৌ।
অন্নতৌ চাধরোষ্ঠৌ চ ক্ষিপ্রং মারয়তে পতিম্ ॥
 
 
পাঠক, পৌরাণিক গ্রন্থ অনুযায়ী বিধবা, বিধবার বৈশিষ্ট্য ও করণীয় ও তার বিবাহবিধান সম্পর্কে মতামত আসুন জেনে নেওয়া যাক। 
 
১। বিধবা নারী সাথে কথা বলা যাবে না৷ [মার্কণ্ডেয় পুরাণ অধ্যায় ৩৫]
ন চালপেজ্জনদ্বিষ্টাং বীরহীনান্তথা স্ত্রিয়ম্ ।
২। স্বামীহীন নারী অশুচি ও অমঙ্গলা । বিধবাকে দেখলে কোনো কাজেই সিদ্ধিলাভ হয় না। নিজের মা ছাড়া সব বিধবারী মঙ্গলবর্জিতা। [স্কন্দপুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ধর্মারণ্যখণ্ড ৭।৪৯-৫২]
জীবহীনো যথা দেহী ক্ষণাদশুচিতাং ব্রজেৎ ।
ভর্তৃহীনা তথা যোষিৎসুস্নাতাপ্য শুচিঃ সদা ॥
অমঙ্গলেভ্যঃ সর্বেভ্যো বিধবা স্যাদমঙ্গলা ।
বিধবাদর্শনাৎসিদ্ধিঃ ক্বাপি জাতু ন জায়তে ॥
বিহায় মাতরং চৈকাং সর্বা মঙ্গলবর্জিতাঃ ।
তদাশিষমপি প্রাজ্ঞস্ত্যজেদাশীবিষোপমাম্ ॥
কন্যাবিবাহসময়ে বাচয়েয়ুরিতি দ্বিজাঃ ।
ভর্তুঃ সহচরী ভূয়াজ্জীবতো ঽজীবতোপি বা ॥
৩। বিধবা নারী মাটিতে শোবে, কেবল রাতেই খাবে। এগুলোকে সনাতন ধর্ম হিসেবে শিবপুরাণে [বায়বীয় সংহিতা ২।১১।২১-২৩] বলা হয়েছে। পাঠক, এই শ্লোকগুলোর বক্তা স্বয়ং মহাদেব শিব।
অথ ভর্তৃবিহীনায়া বক্ষ্যে ধর্মং সনাতনম্।
ব্রতং দানং তপঃ শৌচং ভূশয়্যানক্তভোজনম্ ॥
ব্রহ্মচর্যং সদা স্নানং ভস্মনা সলিলেন বা।
শান্তির্মৌনং ক্ষমা নিত্যং সংবিভাগো যথাবিধি ॥
অষ্টাভ্যাং চ চতুর্দশ্যাং পৌর্ণমাস্যাং বিশেষতঃ।
একাদশ্যাং চ বিধিবদুপবাসোমমার্চনম্ ॥
পাশাপাশি স্কন্দপুরাণে [ব্রহ্মখণ্ড ধর্মারণ্যখণ্ড ৭।৬৭] বলা হয়েছে, বিধবা নারী খাটে শুলে তার মৃত স্বামী পতিত হয়। এজন্য মৃত স্বামীর মঙ্গলকামনায় মাটিতেই সে শোবে।
পর্যঙ্কশায়িনী নারী বিধবা পাতয়েৎপতিম্।
তস্মাদ্ভূশয়নং কার্য্যং পতিসৌখ্যসমীহয়া ॥
৪। 'শ্বেতবস্ত্রাণি ধারয়েৎ...বিধবাশ্চ বিশেষতঃ' বিধবা নারী সাদা বস্ত্র পড়বে [স্কন্দপুরাণ প্রভাসখণ্ড প্রভাসক্ষেত্র মাহাত্ম্য ২৮।৮৪]। 
 
  • এরপরের অনুচ্ছেদে যাওয়ার আগে কিছু শাস্ত্রীয়(?) শব্দ জেনে নেওয়া দরকার। বিধবা বা যে কোনো নারী যার পূর্বে একবার বিবাহ হয়েছে সে যদি স্বামী মারা যাওয়ায় বা পরিত্যক্তা হয়ে আবার বিয়ে করে তবে তাকে বলে 'পুনর্ভূ'। তার দ্বিতীয় পতির সাথে উৎপন্ন সন্তানকে 'পৌনর্ভব'। সূত্র: প্রক্ষিপ্ত প্রচলিত মনুস্মৃতি ৯।১৭৫। গ্রন্থান্তরে তার পূর্ব মৃত স্বামীর নাম হবে 'দিধিষুপতি'। এবার বিধবা নারী যদি বিয়ে করেও ফেলে তবে তার ও তার পরের সন্তানের সাথে কী ব্যবহার করা হবে ?
(১) এমন মেয়ে তার পরিবার ও বংশকে দগ্ধ করে অর্থাৎ ছাই করে ফেলে। [স্কন্দপুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ধর্মারণ্যখণ্ড ২১।৪০]
উদকস্পর্শিতা যাচ যাচ পাণিগৃহীতকা ॥
অগ্নিং পরিগতা যা চ পুনর্ভূঃ প্রসবা চ যা ॥
ইত্যেতাঃ কাশ্যপেনোক্তা দহন্তি কুলমগ্নিবৎ ॥
(২) বিধবা মেয়েকে যে দান করবে আবার পরের বিবাহে তার কৃমি জন্ম হবে পরজন্মে। [মার্কণ্ডেয় পুরাণ অধ্যায় ১৫]।
পুনর্দাৎ চ কন্যায়াঃ কৃমিরেবোপজায়তে ।
দেবতা-পিতৃ-বিপ্রাণামদত্বা যোঽন্নমশ্নুতে॥১৫.১৩॥
শুধু তাই না বিধবার দ্বিতীয় স্বামীও জরাজীর্ণ হয়ে জীবনযাপন করে ও কৃমি হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। [ঐ, অধ্যায় ১৪]
পুনর্ভূপতয়ো জীর্ণা যাবজ্জীবন্তি যে নরাঃ ।
ইমে কৃমিত্বমাপন্না ভক্ষ্যন্তেঽত্র পিপীলিকৈঃ॥১৪.৮২॥
(৩) ১. বিধবার পুনর্বিবাহে জন্মগ্রহণ করা সন্তানকে শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ দেওয়া যাবে না [গরুড় পুরাণ ১।৯৯।৬-৭]।
পিতৃমাতৃপরাশ্চৈব ব্রাহ্মণাঃ শ্রাদ্ধদেবতাঃ।
রোগী হীনাতিরিক্তাঙ্গঃ কাণঃ পৌনর্ভবস্তথা ॥
অবকীর্ণ্যাদ যো যে চ যে চাচারবিবর্জিতাঃ।
অবৈষ্ণবাশ্চ তে সর্বে ন শ্রাদ্ধার্হাঃ কদাচন ॥
২. এদের সাথে যদি স্পর্শও হয় তবে তখনই স্নান করতে হবে [স্কন্দপুরাণ আবন্ত্যখণ্ড রেবাখণ্ড ৫০।৬-৮]।
রোগী হীনাতিরিক্তাঙ্গঃ কাণঃ পৌনর্ভবস্তথা....সোঽস্পৃশ্যঃ কর্মচাণ্ডালঃ স্পৃষ্ট্বা স্নানং সমাচরেৎ ॥
৩. এমন বিধবা যার দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে সেই নারীর ঘরের অন্ন খাওয়া যাবে না [পদ্মপুরাণ স্বর্গখণ্ড অধ্যায় ২৮]।
পৌনর্ভবচ্ছত্রিকয়োরভিশপ্তস্য চৈব হি।
পুনর্ভূবো বিশেষেণ তথৈব দিধিষূপতেঃ ।
 
 
  • সিদ্ধান্ত: বেদে [অথর্ববেদ ১৮।৩।১-৩] সুস্পষ্ট ভাবে বিধবার বিবাহের উল্লেখ আছে। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী শাস্ত্রোক্ত ব্রহ্মচর্য, দত্তক, নিয়োগ প্রভৃতির আলোচনাপূর্বক বর্তমান কালের জন্য বিধবাবিবাহই সর্বোত্তম বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
১। প্রশ্নঃ বেদের দৃষ্টিকোণে বলুন বিধবা স্ত্রী ও বিপত্নীক পুরুষের পুনর্বিবাহ হওয়া উচিত নাকি অনুচিত ? স্বীয় স্ত্রী জীবিত থাকতে বা মৃত্যুর পরে ২য় বা ৩য় বিবাহ দোষজনক কি না ?
উত্তরঃ বিধবা স্ত্রীর পুনর্বিবাহ হওয়া উচিত এবং নিজের স্ত্রী জীবিত থাকতে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে না । কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর অধিকার রয়েছে সে পুনর্বিবাহ করবে নাকি করবে না । এমন অধিকার বিধবা স্ত্রীরও
হওয়া উচিত ।
- মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবনচরিত [পণ্ডিত লেখরাম] পৃষ্ঠা ২৮৭-৮৮
 
২। আরেকটি প্রমাণ, কলকাতা ভ্রমণকালে বিধবাবিবাহ সমর্থন ও ১৮ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার কথা [ স্বামী দয়ানন্দের জীবনচরিত এবং তার শিক্ষা - মহর্ষির সাক্ষাৎ শিষ্য হরবিলাস সারদা ]
 
৩। পুনা প্রবচনের ১২তম দিনে মহর্ষি বিধবাবিবাহ খণ্ডনে অনিচ্ছুক বলেছেন -
বিধবা বিবাহের যারা বিরোধী তাদের পক্ষ সমর্থন করে বিধবাবিবাহের খণ্ডনের আমার ইচ্ছা নেই । তবে এটা অবশ্যই বলবো যে ঈশ্বরের নিকট নারী-পুরুষ উভয়েই সমান । কেননা তিনি ন্যায়কারী ও পক্ষপাতবিহীন । যখন পুরুষকে পুনর্বিবাহের আজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে তবে নারীকে দ্বিতীয় বিবাহে কেন আটকানো হবে ?
 
৪। পুনা প্রবচনের ১২তম দিনে মহর্ষি বিধবাবিবাহ সমর্থন করে বলেছেন,
বর্তমান কালের সামাজিক ব্যবস্থা দৃষ্টে 'বিধবা-বিবাহ যে সর্বপ্রকারে ভালো' একথা স্বীকার করিতে হয়। আর এই ব্যবস্থা প্রাচীন আর্যদের ব্যবহার বিরুদ্ধ নহে।
 
  •  প্রমাণসকল ছবিসহ দেখুন এই ভিডিয়ো আলোচনায় -


 

 
 
ইত্যোম্ 
 
© বৈদিক সন্দেশ

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম