বৈদিক 'সন্ধ্যা' নাকি 'নামাজ' কোনটা শ্রেষ্ঠ ?

 

প্রশ্নঃ বৈদিক সন্ধ্যা প্রতিদিন প্রাতঃ ও সায়ং—মোট দুইবার পালন করার বিধান আছে, অথচ নামাজ এক দিনে পাঁচবার করার বিধান রয়েছে। তাই স্পষ্ট হয় যে নামাজ বৈদিক সন্ধ্যার চেয়ে উত্তম, কারণ পাঁচবার করার ফলে তার প্রভাব বেশি থাকবে।

(শঙ্কা—ইরশাদ খান)

সমাধানঃ

১. বৈদিক সন্ধ্যা দুইবার করার বিধান [সামবেদ ১৪, অথর্ববেদ ১৯।৫৫।৩-৪]] রাখা হয়েছে কারণ প্রাতঃকালে করা সন্ধ্যা থেকে প্রাতঃকাল থেকে সায়ং পর্যন্ত পরমেশ্বরের স্মরণে উৎকৃষ্ট আচরণ করার প্রেরণা মেলে, আর সায়ংকালে করা সন্ধ্যা থেকে সায়ং থেকে পরবর্তী প্রাতঃকাল পর্যন্ত পরমেশ্বরের স্মরণে উৎকৃষ্ট আচরণ করার প্রেরণা মেলে।

২. বৈদিক সন্ধ্যা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক এবং প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা বিধি, যা বেদের নির্দেশনা অথা ঋষি-মুনিদের অভিজ্ঞতার [মনু০ ২।১০১-৩] উপর ভিত্তি করে যথাক্রমে গঠিত ও পালিত। অথচ নামাজ হলো মাত্র ১৪০০ বছর আগে এক মতাদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত রচিত পদ্ধতি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পূর্বে মানুষ কীভাবে ঈশ্বর আরাধনা করত, সে বিষয়ে ইসলাম মৌন।

৩. নামাজের ইতিহাস [বুখারী ৩২০৭]পড়লে দেখা যায় মুসার পরামর্শে মেরাজে মুহম্মদ আল্লাহর কাছ থেকে আবেদন করে দিনে ৫০ বার থেকে ৫ ওয়াক্ত সীমাবদ্ধ করার অনুরোধ করেন মুসলিমদের কষ্ট হবে এই ভেবে । এ থেকে স্পষ্ট হয় এটি কল্পিত ঘটনা। ইসলামি ঈশ্বর কি এত অপরিপক্ব ও অজ্ঞ যে তিনি জানেন না একটি কতবার নামাজ পড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বা সম্ভব ? এরপর মুহাম্মদের মাধ্যমে সুরাহা করা হলো—এটি মুহাম্মদ সাহেবের প্রশংসার কৌশল (Marketing Agenda)। নিরপেক্ষরা এটিকে নবীকে আল্লাহর থেকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া বলবে। 

৪. বৈদিক সন্ধ্যার বিধি থেকে তার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়। মানুষে শরীর, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার থাকে। বৈদিক সন্ধ্যায় আচমন মন্ত্র দ্বারা শরীর, ইন্দ্রিয়স্পর্শ ও মার্জন মন্ত্র দ্বারা ইন্দ্রিয়, প্রাণায়াম মন্ত্র দ্বারা মন, অঘমর্ষণ মন্ত্র দ্বারা বুদ্ধি, মানস পরিক্রমা মন্ত্র দ্বারা চিত্ত ও উপস্থান মন্ত্র দ্বারা অহংকার সুস্থিতি লাভ করে। এরপর গায়ত্রী মন্ত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরের স্তুতি-প্রার্থনা ও উপাসনা সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ ঈশ্বরকে নমস্কার করা হয়।

এটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা ব্যক্তি ধর্মীয় ও সদাচারী করে, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ অর্জন করায়।

নামাজে ৫ বার অন্য যারা আছে তাদের অভিশপ্ত বলে নিন্দা করা হয়, অনেকে জানেও না নামাজে তারা কী বলে। সম্ভবত এজন্য ইসলাম কুরআনের বিশ্বাসের প্রতি প্রশ্ন তোলা নিষিদ্ধ। এতে স্বাধীন চিন্তার স্থলে গড্ডালিকাপ্রবাহ বেশি দেখা যায়। ইসলামে জীবনের লক্ষ্য মোক্ষের পরিবর্তে ভোগ। জান্নাত, হুর, মিষ্টি পানির ঝর্ণা, মদের নদী, গেলমান। আপনি কি এগুলো জীবনধারার লক্ষ্য মনে করেন? এটা যে কোনো মরুভূমির দরিদ্র বাসিন্দার স্বর্ণালী স্বপ্নের মত। বৈজ্ঞানিক বৈদিক সন্ধ্যার সামনে নামাজ শুধুই উদ্দেশ্যবিহীন গড্ডালিকাপ্রবাহ হিসেবে প্রমাণিত।

৫. বৈদিক ঈশ্বরের স্তুতি করার উদ্দেশ্য ঈশ্বরের সদৃশ যথাসম্ভব জীবাত্মার সীমাতে ন্যায়পরায়ণ, দয়ালু, সত্যবাদী ও উত্তম কর্মী হওয়া। ইসলামের ঈশ্বর অসমর্থ মনে হয়। তাকে বারংবার নিজের জ্ঞান পরিবর্তন করতে হয়—কখনো তওরাত, কখনো জবুর, কখনো ইঞ্জিল, এবং সর্বশেষ কুরআন পাঠানো, আর বলতে হয় বাকিরা পরিবর্তন করে ফেলেছে তাই নতুন করে পাঠানো লাগলো, অথচ চাইলে আগের পরিবর্তন সংশোধন করে দেওয়াটাই ছিলো বুদ্ধিমানের কাজ। ইসলামের ঈশ্বরের বার্তা পৌঁছে দিতে ৬০০ ডানার ফেরেশতা [মুসলিম ৩২৩] প্রয়োজন। বৈদিক ঈশ্বরের জন্য কোনো মধ্যস্থতা লাগে না। ইসলামের আল্লাহ আরশে [কুরআন ২০.৫] বসে অবস্থান করেন, শেষরাতে আবার নেমে আসেন পৃথিবীর নিকট আসমানে [মুসলিম ১৬৬২] । তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে উড়ন্ত প্রাণী দরকার, [বুখারী ৩২০৭] যা শুধুমাত্র মুহাম্মদ সাহেবের জন্য ছিল। তাই মুসলিমরা সারাজীবন অন্য নবীর চেয়ে মুহম্মদ রাসূলের প্রশংসা করতে বাধ্য [কুরআন ২.২৫৩]। বৈদিক ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ে, আত্মায় বাস করেন, তাই নিজেই সর্বশক্তিমান ও সম্পূর্ণ সক্ষম, কারো ওপর নির্ভরশীল নন। ইসলামের ঈশ্বর মুহাম্মদ সাহেবের সুপারিশ গ্রহণ করেন [মুসলিম ৫৮৩৪]। বৈদিক ঈশ্বর যেকোন মানুষের কর্ম অনুসারে ফল দেন, পক্ষপাত করেন না। তাই নামাজ নবীর চেয়ে বেশি রাসূলের প্রশংসা। কোথায় নামাজে ভোগময় পরলোকের জন্য অসমর্থ আল্লাহর ইবাদত, আর কোথায় আনন্দময় মুক্তির জন্য বৈদিক সন্ধ্যায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপাসনা।

উপর্যুক্ত কারণে বৈদিক সন্ধ্যা একমাত্র ঈশ্বর আরাধনার জন্য নির্ধারিত, তাই নামাজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, নামাজের সাথে যার কোনো তুলনাই অপ্রাসঙ্গিক ।


© বৈদিক সন্দেশ

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম