পৌরাণিক বিধি অনুযায়ী সতী নারীর বৈশিষ্ট্য কী কী ?

পৌরাণিক বিধি অনুযায়ী সতী নারীর বৈশিষ্ট্য কী কী ?
 
সতী নারীর সিঁদুরের শাস্ত্রীয় প্রমাণ হিসেবে স্কন্দপুরাণের ব্রহ্মখণ্ডের [ধর্মারণ্যখণ্ড ৭।২৮] উদ্ধৃতি অনেকেই দিয়ে থাকে। যদিও সেখানে হলুদ, কুঙ্কুম, পানের উল্লেখও আছে যদিও তা অনুসৃত হয় না।
হরিদ্রাং কুকুমং চৈব সিন্দূরং কজ্জলং তথা।
কূর্পাসকং চ তাম্বূলং মাঙ্গল্যাভরণং শুভম্ ॥
পুরাণে যেখানে নারীর বা সতী নারীর প্রশংসা আছে, তার প্রতি ভালো কথা আছে সেখানে এসব নারীর জন্যই ভালো বলা। স্বাভাবিক সব নারীর জন্য নয়। অর্থাৎ যদি নিচের বৈশিষ্ট্য ঐ নারীর মধ্যে না থাকে তবে তার প্রতি এসব প্রযোজ্য না। তবে ঐ অধ্যায়েই বেদব্যাসের কথায় সতী নারীর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, শিবপুরাণের রুদ্রসংহিতাতেও পার্বতীখণ্ডের ৫৪তম অধ্যায়ে বিদ্যমান। যা নিম্নরূপ-
 
১। স্বামী খাওয়ার পর স্ত্রী খাবে, স্বামী দাঁড়ালে স্ত্রীও পেছেন পেছনে দাঁড়িয়ে যাবে৷ স্বামী যখন জাগবেন স্ত্রী যখন ঘুমাবে, আর স্ত্রী স্বামী যখন ঘুমাবেন স্ত্রী তখন জেগে থাকবে। স্বামী যদি বিদেশে থাকে বা কোথাও কোনো কাজে তবে স্ত্রী কোনো গয়না পড়বে না।
 
২। স্বামীর নাম স্ত্রী উচ্চারণ করবে না, পরপুরুষ তো দূরের কথা। স্বামী যদি স্ত্রীকে মারেও তবুও স্ত্রী খু্শি থাকবে। স্বামী যা বলবে তাই করবে। যদি পালটা আঘাত করতে যায় স্ত্রী তবে পরজন্মে বাঘিনী হয়।
ভুঙ্ক্তে ভুক্তে স্বামিনি চ তিষ্ঠ তি ত্বনুতিষ্ঠতি ॥
বিনিদ্রিতে যা নিদ্রাতি প্রথমং পরিবুধ্যতি ॥
অনলঙ্কৃতমাত্মানং দেশান্তে ভর্তরি স্থিতে ॥
কার্যার্থং প্রোষিতে ক্বাপি সর্ব্বমণ্ড নবর্জিতা ॥
ভর্তুর্নাম ন গৃহ্ণাতি হ্যায়ুষোঽস্য হি বৃদ্ধয়ে ॥
পুরুষান্তরনামাপি ন গৃহ্ণতি কদাচন ॥
আকৃষ্টাপি চ নাক্রোশেত্তাডিতাপি প্রসীদতি ॥
তাডিতা তাডয়েচ্চেত্তং সা ব্যাঘ্রী বৃষদংশিকা ॥
 
৩। খাদ্য যা পাবেন তা আগে স্বামীকে খাইয়ে তারপর তার উচ্ছিষ্ট স্ত্রী নিজে খাবেন।
সেবতে ভর্ত্তুরুচ্ছিষ্টমিষ্টমন্নং ফলাদিকম্ ॥
শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা পার্বতীখণ্ড ৫৪।২৬ অনুযায়ী উক্ত উচ্ছিষ্টকে মহাপ্রসাদ ভাবতে হবে।
মহাপ্রসাদ ইত্যুক্ত্বা পতিদত্তম্পতিব্রতা। 
 
৪। সামাজিক উৎসব দেখবেন না, তীর্থে যাবেন না৷ যদি তীর্থে যেতে ইচ্ছা হয় তবে স্বামীর পা ধুয়ে জল পান করবেন।
দূরতো বর্জ্জয়েদেষা সমাজোৎসবদর্শনম্ ।
ন গচ্ছেত্তীর্থয়াত্রাদিবিবাহপ্রেক্ষণা দিষু ॥
তীর্থস্নানার্থিনী চৈব পতিপাদোদকং পিবেৎ ॥
 
৫। শিব ও বিষ্ণুর থেকেও স্বামী স্ত্রীর কাছে পূজ্য। যে নারী স্বামীর কথায় রাগ করে পালটা উত্তর দেয় সে পরের জন্মে কুকুর বা শিয়াল হয়।
শঙ্করাদপি বা বিষ্ণোঃ পতিরেবাধি কঃ স্ত্রিয়ঃ ॥
উক্তা প্রত্যুত্তরং দদ্যান্নারী যা ক্রোধতৎপরা ॥
সরমা জায়তে গ্রামে শৃগালী নির্জনে বনে ॥
 
৬। নারীদের একমাত্র পরমধর্ম হলো স্বামীর চরণযুগল পূজা করে আহার গ্রহণ করা।
স্ত্রীণাং হি পরমশ্চৈকো নিয়মঃ সমুদাহৃতঃ।
অভ্যর্চ্য চরণৌ ভতুর্ভো ক্তব্যং কৃতনিশ্চয়া ॥
 
৭। যে নারী স্বামীকে নিবেদন না করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খায় সে পরজন্মে বিষ্ঠা খাওয়া গ্রাম্যশূকরী হয়।
যা ভর্তারং পরিত্যজ্য মিষ্টমশ্নাতি কেবলম্ ।
গ্রামে সা সূকরী ভূয়াদ্বল্গুলী বাথ বিঙ্ভুজা ॥
 
৮। যে নারী নিজের সতীনকে হিংসা করে সে দুর্ভাগা হয়ে থাকে।
যা সপত্নীং সদৈর্ষ্যেত দুর্ভগা সা পুনঃপুনঃ ॥
 
৯। যে নারী স্বামী মারা গেলে চিতায় তার সাথে সহমরণে যায় সেই নারী নিজের শরীরের লোমসংখ্যার সমান কোটি বছর স্বামীর সাথে স্বর্গসুখ ভোগ করে।
অনুব্রজন্তী ভর্তারং গৃহাৎপিতৃবনং মুদা ।
পদেপদেশ্বমেধস্য ফলং প্রাপ্নোত্যসংশয়ম্ ॥
যাবৎস্বলোমসঙ্খ্যাস্তি তাবৎকোট্যযুতানি চ ।
ভর্ত্রা স্বর্গসুখং ভুঙ্ক্তে রমমাণা পতিব্রতা ॥
 
১০। স্ত্রী বারান্দায় বা চৌকাঠে বসবে না।
নোলূখলে ন মুষলে ন বর্দ্ধন্যাং দৃষদ্যপি ।
ন যন্ত্রকে ন দেহল্যাং সতী চোপবিশেৎ ক্বচিৎ ॥
 
১১। সাধ্বী স্ত্রীরা উঁচু আসনে বসবে না, পরের বাড়ি বেড়াতে যাবেন না।
উচ্চাসনং ন সেবেত ন ব্রজেৎপরবেশ্মসু।
 
আর এসব বিধি কি পতি ভালো হলেই পালনীয় নাকি পতি খারাপ হলেও পালনীয় ? ব্যাসবচনে -
ক্লীবং বা দুরবস্থং বা ব্যাধিতং বৃদ্ধমেব বা ।
সুস্থিরং দুঃস্থিরং বাপি পতিমেকং ন লঙ্ঘয়েৎ ॥
অর্থাৎ, পতি ক্লীব, বৃদ্ধ, দুরবস্থা, সুস্থির, দুঃস্থির যেমনই হোক না কেন কখনোই পতিকে অতিক্রম করে কোনো কাজ করা যাবে না। 
 
© বৈদিক সন্দেশ

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম