মুণ্ডকোপনিষদের নামে শঙ্করাচার্যের বানোয়াট শ্লোক উদ্ধৃতি !

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৫ম অধ্যায়ের ২য় শ্রুতিটি হলো,

য়ো য়োনিং য়োনিমধিতিষ্ঠত্যেকো বিশ্বানি রূপাণি য়োনীশ্চ সর্বাঃ।
ঋষিং প্রসূতং কপিলং য়স্তমগ্রে জ্ঞানৈর্বিভর্তি জায়মানং চ পশ্যেৎ॥
 
সরলার্থঃ যে পরমাত্মা প্রত্যেক যোনির একমাত্র অধিষ্ঠাতা এবং সমস্ত আকৃতিযুক্ত পদার্থের রূপ এবং সকলের উৎপত্তির কারণ, যিনি পুরাকালে উৎপন্ন কপিল ঋষিকে জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ করেছিলেন; সৃষ্টিতে প্রকট সেই পরমাত্মাকে মুমুক্ষুগণ দর্শন (সম্যক্ উপলব্ধি) করেন॥২॥
 
এই শ্রুতির ব্যাখ্যায় শঙ্করাচার্য লিখেছেন, 
 
"ততস্তদানীং তু ভুবনমস্মিন্‌প্রবর্ততে কপিলং কবীনাম্‌। স ষোড়শাস্ত্রো পুরুষশ্চ বিষ্ণোর্বিরাজমানং তমসঃ পরস্তাৎ" ইতি শ্রুয়তে মুণ্ডকোপনিষদি
 অথচ এই জাতীয় কোন বাক্যই মুণ্ডকোপনিষদেই নেই । অর্থাৎ শঙ্কর এখানে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন ।
 

গীতাপ্রেসও তাঁদের টীকায় স্বীকার করেছে এই বাক্য মুণ্ডকোপনিষদে নেই । 

 
এই শ্রুতির প্রকৃত ব্যাখ্যা হলো,  পরমাত্মা প্রত্যেক যোনির অধিষ্ঠাতা এবং সকল রূপ অর্থাৎ আকৃতিযুক্ত সমস্ত কার্যবস্তুর অধিষ্ঠাতা বা নিয়ামক। তিনি জগতের সকল কার্য-কারণের প্রবর্তক। সেই পরমাত্মাই প্রাচীনকালে উৎপন্ন সাংখ্যদর্শনের প্রণেতা মহর্ষি কপিলকে ‘প্রকৃতি-পুরুষ বিবেকরূপ’ জ্ঞান দ্বারা পোষণ করেছিলেন। সকল মুমুক্ষু (মুক্তিকামী) পুরুষ সৃষ্টিতে প্রকাশিত এই পরমাত্মাকে তাদের হৃদয়ে অনুভব করেন। কেননা, এই সৃষ্ট জগতের মধ্যেই পরমাত্মার সত্তার অনুভব হতে পারে। ভগবান‌ মনু মহারাজ বলেছেন, “তমঃ-রূপ প্রকৃতির প্রেরক স্বয়ম্ভূ পরমাত্মা অগ্ন্যাদি ভূতসমূহকে প্রকটাবস্থায় এনে সৃষ্টিতে স্বয়ং প্রকট হলেন (মনু০ ১।৬)।” অতএব, জগতের ব্যক্ত অবস্থাই অব্যক্ত-সূক্ষ্ম পরমাত্মার প্রকট অবস্থা ও জগতের অব্যক্ত অবস্থাই পরমাত্মার অপ্রকট অবস্থা।

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম