পৌরাণিক ভূগোল বিজ্ঞান - জলের উপর নৌকার মত সমতল পৃথিবী


💥 পৌরাণিক ভূগোল বিজ্ঞান - জলের উপর নৌকার মত সমতল পৃথিবী 💥
বর্তমানে প্রচলিত পুরাণ লিখেছে বেদজ্ঞানহীন একদল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে ভূগোলের সামান্য জ্ঞানটুকুও ছিলো না। এব্যাপারে আমরা নজর রাখতে পারি বিষ্ণুপুরাণে।
বিষ্ণুপুরাণ প্রথম অংশের ৪ নং অধ্যায়ের কিছু শ্লোক পর্যালোচনা করে দেখাবো বিষ্ণুপুরাণকার কতখানি বেদজ্ঞানহীন ও ভূগোলজ্ঞানহীন ছিলেন!
বিষ্ণুপুরাণের অনুবাদ ও শ্লোকের ক্ষেত্রে আমি গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর থেকে প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ অনুসরণ করেছি।
চলুন তবে রেফারেন্স সমেত বিষ্ণুপুরাণকারের ভূগোল জ্ঞান দেখি!
🚩🚩বিষ্ণুপুরাণ
🚩🚩১ম অংশ
🚩🚩চতুর্থ অধ্যায়
অধ্যায়ের নামঃ শ্রী ব্রহ্মার উৎপত্তি, বরাহ ভগবান দ্বারা পৃথিবীর উদ্ধার ও শ্রী ব্রহ্মার লোক রচনা
শ্লোক নং ৪৫-৪৮।
এখানে মহাবিজ্ঞানী বরাহ পৃথিবীকে জল থেকে তুলে কিসব বৈজ্ঞানিক কাজ কর্ম করছে তার বিবরণ দিয়েছে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুরাণকার। মানে চোরের সাক্ষী বাটপার🐸
চলুন আগে মূল শ্লোক আর অনুবাদ দেখি- 
 
শ্রীপরাশর উবাচ
এবং সংস্তূয়মানস্স্তু পরমাত্মা মহীধরঃ।
উজ্জহার ক্ষিতিং ক্ষিপ্রং ন্যস্তবাংশ্চ মহাম্ভসি৷৷ ৪৫
শ্রীপরাশরদেব বললেন—এইভাবে স্তুতি করা হলে
পৃথিবী ধারণকারী পরমাত্মা বরাহদেব শীঘ্রই সেটি উঠিয়ে অপার জলের ওপর স্থাপন করলেন৷৷ ৪৫॥ 
 
তস্যোপরি জলৌঘস্য মহতী নৌরিব স্থিতা। 
বিততত্বাত্তু দেহস্য ন মহী যাতি সম্ প্লবম্৷৷ ৪৬ ৷৷
সেই জলসমূহের ওপর সেটি এক বৃহৎ নৌকার ন্যায় অবস্থান করছিল এবং বহু বিস্তৃত আকার হওয়ায় সেটি ভাসমানই থাকল, ডুবে গেল না। ৪৬ 
 
ততঃ ক্ষিতিং সমাং কৃত্বা পৃথিব্যাং সোঽচিনোদ্‌গিরীন্।
যথাবিভাগং ভগবাননাদিঃ পরমেশ্বরঃ॥ ৪৭
পরে সেই অনাদি পরমেশ্বর পৃথিবীকে সমতলভাবে বিস্তৃত করে তার ওপর এখানে সেখানে পর্বতের বিভাগ করে স্থাপন করলেন ॥ ৪৭ 
 
প্রাক্ সর্গদগ্ধানখিলান্ পর্বতান্ পৃথিবীতলে। 
অমোঘেন প্রভাবেণ সসৰ্জামোঘবাঞ্ছিতঃ৷৷ ৪৮ ৷৷
সত্যসংকল্প ভগবান তাঁর অমোঘ প্রভাবের সাহায্যে পূর্বকল্পের শেষে দগ্ধ হওয়া সমস্ত পর্বতকে পৃথিবীর তলের ওপর যথাস্থানে রচনা করলেন। ৪৮
 


 
 
সমীক্ষাঃ ১) এখানের কথাগুলো এক মহাবিজ্ঞানময় বইয়ের অনুরূপ মনে হচ্ছে না?🐸
২)আমরা জানি পৃথিবী থাকে মহাশুন্যে। মহাশূন্যে কোন জল নেই তাহলে ৪৫ নং শ্লোকে বরাহ পৃথিবীকে জলের ওপর স্থাপন করলেন কিভাবে?
৩) ৪৬ নং শ্লোক দেখে অনুমান করা যায় পুরাণকার পৃথিবীকে সমতল মানেন নাহলে পৃথিবীকে জলের উপরে নৌকার মতো ভাসমান বলবেন কেনো ? গোলাকৃতি কোন কিছু জ্বলে নৌকার মতো করে ভাসতে পারে না। সমতল কিছু অবশ্য ভাসতে পারে তাও আপেক্ষিক গুরুত্ব, ঘনত্ব ইত্যাদির বিবেচনায়! আরো কথা হলো, যদি ধরেই নেই পৃথিবী ভেসে রইলো তাহলে আগে ডুবে গিয়েছিলো কিভাবে?😑
৪) ৪৭ নং শ্লোকে দেয়া "সমাং কৃত্বা পৃথিব্যাং" এবং অনুবাদে থাকা "পৃথিবীকে সমতলভাবে বিস্তৃত করে" এ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে পুরাণকারের মতে পৃথিবী সমতল।😀 জয় পুরাণের জয়। এই অবৈদিক বই নাকি আবার বেদার্থ করতে কাজে লাগবে? পুরাণপ্রেমীদের উচিত কচুগাছে ফাসি নিয়ে মরে যাওয়া।
৫) ৪৭ নং শ্লোকে অনেকে কুযুক্তি লাগাতে পারে যে এখানে মুলত পৃথিবীর ভূভাগ বন্ধুর ছিলো তাকে সমতল করা হয়েছে এমন বোঝানো হয়েছে। পৃথিবী সমতল এমন বোঝায়নি।
কিন্তু এই যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। কেননা প্রথমে বলা হয়েছে পৃথিবী নৌকার মতো ভেসেছে আর তা অতি বিস্তৃত হওয়ায় ডুবে যায়নি। 
 
সুতরাং এতে বোঝাই যাচ্ছে পৃথিবী মোটামুটি সমতলভাবে বিস্তৃত ছিলো। সুতরাং দ্বিতীয় শ্লোকে বন্ধুর থেকে সমতল করা হয়েছে এমনটা মেনে নিলেও শঙ্কা রয়ে যায় আগের শ্লোকে যেহেতু সমতলের প্রসঙ্গ এসে তো এখানে সেই সমতল পৃথিবীকেই আরো বর্ধিত করা হয়েছে এমন ধারণা অধিক সমীচীন হবে না কেনো?
 
আরো এক গুরুতর শঙ্কা উপস্থিত হয় যদি তখন পৃথিবীকে বন্ধুর থেকে সমতল করা হলো তবে বর্তমানে পৃথিবীতে বন্ধুরতা রয়ে গেলো কেনো? আবার পরের শ্লোকে আমরা পাহাড় স্থাপনের কথা পাই, পাহাড় স্থাপনে তো আবার বন্ধুর হলো তবে আপনার অর্থ সম্পূর্ণ কদর্থ। এবং এই যুক্তিই ঠিক যে পুরাণকার পৃথিবীকে সমতল মেনেছেন এবং তাকে পুনরায় বিস্তৃত করিয়েছেন মহাবিজ্ঞানী বরাহের থেকে। মনে পড়ে গেলো সেই মহাবিজ্ঞানময় মাদুরের মতো বিস্তৃত করার কথা। 
 
৬) ৪৮ নং শ্লোকের সাথে আমি আরেক মহাগ্রন্থের মিল পাচ্ছি যাতে লেখা আছে, ভুমির উপরে পাহাড় পর্বত ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যাতে ভুমি উলটে না পরে যায়। আপনারা এখানের মহাবিজ্ঞান বুঝেছেন কি?🐸
৭) ৪৬ নং শ্লোক অনুযায়ী পৃথিবী জলের উপর ভাসছে। এখন প্রশ্ন হলো সে কোন জলের উপরে ভাসছে? নদীর জল, না সমুদ্রের, না অন্য কোন জল? এখনো জলের উপরে ভাসছে কি? যদি হয় তাহলে কোন স্যাটেটেলাইট ইমেইজে তা দেখা যাচ্ছেন না কেনো? আর যদি তা না হয় তাহলে সেই জলের উৎস কই গেলো, তখনই বা ছিলো কোথায়? সে জলের উৎসকে ধারণ করত কোন সত্ত্বা? 
 
আছে এগুলোর কোন উত্তর? পুরাণপ্রেমিকগণ? 
 
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হওয়া গেলো যে পুরাণ লিখেছে এমন কোন ব্যাক্তি যার মধ্যে বেদজ্ঞানের ছিটেফোটাও নেই, আছে শুধু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধকতা- 
 
নাহলে কি বলতে পারে যে,
মহাবিশ্বের জলে পৃথিবী ডুবে গেলো
পৃথিবী সমতল
পৃথিবী জলের উপরে ভাসছে, নৌকার মতো।
 
এই আলোচনা থেকে বোঝা গেলো এইসব পুরাণ লেখাই হয়েছে আমাদের সমৃদ্ধ আর্যজাতিকে বেদ ও জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে দূরে রেখে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। এর পাতায় পাতায় এরকম বেদবিরুদ্ধতা, অবৈজ্ঞানিকতা, অমানবিকতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, ঋষিকোটি, মহাত্মা, সনাতনের প্রাণপুরুষদের নামে যাচ্ছেইতাই তথ্য, অশ্লীলতায় ভরপুর। তাই আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব এই পুরাণ নামক মহাত্মাদের অপমানকারী, বেদবিরুদ্ধ, ফালতু গ্রন্থকে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে শতবছরের কলঙ্ক মোচন করা। এছাড়া আর্যজাতির মুক্তি নেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post

যোগাযোগ ফর্ম